গানের গুঁতো । সুকুমার রায় । আবোল তাবোল


গানের গুঁতো
সুকুমার রায়

গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা ।
আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা !
গাইছে ছেড়ে প্রাণের মায়া, গাইছে তেড়ে প্রাণপণ,
ছুটছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভন্‌ভন্ ।
মরছে কত জখম হয়ে করছে কত ছট্‌ফট্—
বলছে হেঁকে, "প্রাণটা গেল, গানটা থামাও ঝট্‌পট্ ।"
বাঁধন–ছেঁড়া মহিষ ঘোড়া পথের ধারে চিৎপাত ;
ভীষ্মলোচন গাইছে তেড়ে নাইকো তাহে দৃকপাত ।
চার পা তুলি জন্তুগুলি পড়ছে বেগে মূর্ছায়,
লাঙ্গুল খাড়া পাগল পারা বলছে রেগে "দূর ছাই !"
জলের প্রাণী অবাক মানি গভীর জলে চুপচাপ্,
গাছের বংশ হচ্ছে ধংস পড়ছে দেদার ঝুপ্‌ঝাপ্ ।
শূন্য মাঝে ঘূর্ণা লেগে ডিগবাজি খায় পক্ষী,
সবাই হাঁকে, "আর না দাদা, গানটা থামাও লক্ষ্মী ।"
গানের দাপে আকাশ কাঁপে দালান ফাটে বিলকুল,
ভীষ্মলোচন গাইছে ভীষণ খোশমেজাজে দিল্ খুল্ ।
এক যে ছিল পাগলা ছাগল, এমনি সেটা ওস্তাদ,
গানের তালে শিং বাগিয়ে মারলে গুঁতো পশ্চাৎ ।
আর কোথা যায় একটি কথায় গানের মাথায় ডাণ্ডা,
'বাপরে' বলে ভীষ্মলোচন এক্কেবারে ঠাণ্ডা ।

✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤✤

সৎপাত্র । সুকুমার রায় । আবোল তাবোল

সৎপাত্র
সুকুমার রায়



শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে-
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো
রঙ যদিও বেজায় কালো ;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;
বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই-
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে 
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়-
কষ্টে সৃষ্টে দিন চলে যায় ।

মানুষ তো নয় ভাইগুলোতার-
একটা পাগল একটা গোঁইয়ার ;
আরেকটা সে তৈরী ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে ।
কনিষ্টটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচটাকা পায়।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পান্ডু রোগে ।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর !
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের ।-
যাহোক, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে ?


Gonf Churi | Sukumar Roy [ গোঁফ চুরি । সুকুমার রায় ]

গোঁফ চুরি
সুকুমার রায়


হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জানত ?
দিব্যি ছিলেন খোসমেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা বসে ঝিমঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে !
আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি করে গোল,
হঠাৎ বলে "গেলুম গেলুম আমায় ধরে তোল !"
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউবা হাঁকে পুলিশ,
কেউবা বলে, "কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস ।"
ব্যাস্ত সবাই এদিক ওদিক করছে ঘোরাঘুরি,
বাবু হাঁকেন, "ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি !"
গোঁফ হারানো ! আজব কথা ! তাও কি হয় সত্যি ?
গোঁফ জোড়া তো তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি ।
সবাই তাকে বুঝিয়ে বলে, সামনে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষণো তা হয়না ।





রেগে আগুন তেলে বেগুন , তেড়ে বলে তিনি,
"কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকে চিনি ।
নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়লা,
এমন গোঁফ তো রাখতো জানি শ্যামবাবুদের গয়লা ।
এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই"--
এই না বলে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায় ।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়,
"কাউকে বেশি লাই দিতে নেই , সবাই চড়ে মাথায় ।
আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর,
গোঁফ জোরা যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর ।
ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধরে খুব নাচি,
মুখ্যগুলোর মুন্ডু ধরে কোদাল দিয়ে চাঁচি ।
গোঁফকে বলে তোমার আমার -গোঁফ কি কার কেনা ?
গোঁফের আমি গঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা ।"